ঢাকা, রবিবার   ১৩ জুলাই ২০২৫

ভাসমান রেস্তোরাঁ হতে যাচ্ছে স্টিমার  পিএস অস্ট্রিচ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

বাংলার মানুষের কাছে নদীপথে যোগাযোগের জন্য এক পরিচিত নাম স্টিমার। লঞ্চ চেনার অনেক আগে থেকে স্টিমারে নদী পাড়ি দেয় তারা। শত বছরের পুরনো এমনই এক স্টিমারটিকে করা হচ্ছে ভাসমান রেস্তোরাঁ। আর এমনটা হলে নদীতে যাত্রী পরিবহণ করতে আর দেখা যাবে পিএস অস্ট্রিচকে।

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, এসব স্টিমার বা প্যাডেল জাহাজের বয়স প্রায় শত বছর। নদীমাতৃক বাংলায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আনতে ১৯২৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার স্টিমারগুলোকে নদীতে নামায়। কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয় স্টিমারগুলো। তারপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সেসব স্টিমারগুলোই চলাচল করছে।

রাষ্ট্র মালিকানা প্রতিষ্ঠান আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাছে বর্তমানে এমন চারটি স্টিমার আছে। এগুলো হচ্ছে পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ন। প্রায় শতবর্ষী হওয়ায় ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া এসব স্টিমারের প্রতি দেশি বিদেশি পর্যটকেরা বেশ আগ্রহ নিয়ে ভ্রমণ করেন এসব নৌযানে।

কিন্তু এসব স্টিমার দিয়ে আর যাত্রী পরিবহণ করতে চায় না বিআইডব্লিউটিসি। সেই ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে প্রাথমিকভাবে পিএস অস্ট্রিচকে ভাসমান রেস্তোরাঁয় পরিণত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে রেস্তোরাঁর জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়াগত কাজও শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিসি।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, ২২৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩০ ফুট প্রস্থ এবং সাড়ে ৫ ফুট ড্রাফটের অস্ট্রিচ ৯০০ জন যাত্রী পরিবহণে সক্ষম। আর পণ্য পরিবহণ ক্ষমতা ১৫০ টন। ঘন্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলাচলে সক্ষম অস্ট্রিচে থাকা বাষ্পীয় ইঞ্জিন ১৯৮৩ সালে সরিয়ে ডিজেল ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়। একই সাথে বাকি স্টিমারগুলোতেও কাঠামোগত পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হয়।

তবে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিচ পুনরায় ঠিক করা হয়। গত জুলাই মাস পর্যন্ত নদীতে যাত্রী পরিবহণ করেছে অস্ট্রিচ। সে মাসে অস্ট্রিচে তলানীতে ফাটল দেখা দিলে মেরামতের জন্য ডকে তোলা হয় জাহাজটি। এরপর আর নদীতে নামানো হয়নি সেটিকে। আর এখন তা ইজারার মাধ্যমে পাকাপাকিভাবে বসিয়ে রাখার পায়তারা করা হচ্ছে।  
তবে কী প্রক্রিয়ায় এবং কেমন শর্তে এই নৌযান ইজারা দেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনও কিছু চূড়ান্ত করে সংস্থাটি। তবে বিআইডব্লিউ এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অ্যাকর্ড লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজটিকে ইজারা নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। আর ইজারা বাবদ প্রতিষ্ঠানটি মাসিক দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা বিআইডব্লিউটিসি’কে দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানা যায়। মূলত তাদের আগ্রহের ভিত্তিতেই জাহাজটিকে রেস্তোরাঁয় পরিণত করার পরিকল্পনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পিএস অস্ট্রিচ ইজারা দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নীতিগত সম্মতি নেওয়া হয়েছে। তবে কাকে, কী পদ্ধতিতে, কী শর্তে এই ইজারা দেওয়া হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ”। 
তবে ব্যক্তি মালিকানার এক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাতেই এমনটা করা হচ্ছে কী না সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন মন্তব্য করেননি এই কর্মকর্তা। একইভাবে এ বিষয়েও কোন কথা বলতে চাননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মফিজুল হক।

প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালে তৈরির পর থেকেই অল্পস্বল্প বিরতি ছাড়া নিয়মিত যাত্রী পরিবহণ করে আসছে অস্ট্রিচসহ অন্যান্য স্টিমারগুলো। এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালন ব্যয় কম হলেও এ নিয়ে আছে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। আর তাতেই ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় এসব নৌযান বিকল হয়ে যাচ্ছে।

//এস এইচ এস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি